1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উচ্চমাধ্যমিকে ছাত্রদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভালো ফল ছাত্রীদেরও

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৮ মে ২০২৪

উচ্চমাধ্যমিকের ফলে কলকাতাকে টেক্কা দিল জেলা। ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নজরকাড়া ফল মেয়েদের। সবমিলিয়ে পাশের হার ৯০ শতাংশ।

https://p.dw.com/p/4fd9v
ভারতের একটি স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা চলছে।
পশ্চিমবঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা প্রচুর নম্বর পেয়েছে। ছবি: Imago/Hindustan Times

পশ্চিমবঙ্গে স্কুল পর্যায়ের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক, অর্থাৎ দশম শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা। তার পরের ধাপ উচ্চমাধ্যমিক অর্থাৎ দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা। আজ তার ফল প্রকাশিত হয়েছে বুধবার।

প্রথম দশে ৫৮ জন

এবার উচ্চমাধ্যমিকে প্রায় ৮ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৮৪ জন। পরীক্ষায় পাশের হার ৮৯.৯৯ শতাংশ।ছেলেদের পাশের হার ৯২.৩২ শতাংশ। মেয়েদের পাশের হার কিছুটা কম, ৮৮.১৮ শতাংশ। 

মেধাতালিকায় প্রথম দশে স্থান পেয়েছে ১৫ জেলার ৫৮ জন পড়ুয়া। এর মধ্যে ছাত্র ৩৫ ও ছাত্রী ২৩ জন। পাশের হার কিংবা প্রথম দশ, দুই মাপকাঠিতে কলকাতাকে টেক্কা দিয়েছে জেলা। 

পাশের হারে প্রথম পূর্ব মেদিনীপুর। মেধাতালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে আছে হুগলি জেলার ১৩ জন পরাক্ষার্থী। বাঁকুড়ার ৯ জন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৭ জন এবং কলকাতার ৫ জন। 

পাঁচশর মধ্যে ৪৯৬ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে আলিপুরদুয়ারের ম্যাক উইলিয়ামস হাইস্কুলের অভীক দাস। দ্বিতীয় হয়েছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের সৌম্যদীপ সাহা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৫। তৃতীয় মালদার অভিষেক গুপ্ত। সে পেয়েছে ৪৯৪। 

উচ্চমাধ্যমিকে চতুর্থ তথা মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন দুই পরীক্ষার্থী। কোচবিহারের সুনীতি অ্যাকাডেমির প্রতীচী রায় তালুকদার এবং চন্দননগরের কৃষ্ণভাবিনী নারীশিক্ষা মন্দিরের স্নেহা ঘোষ। উভয়ের প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৩। পঞ্চম স্থানে কন্টাই হাইস্কুলের সায়ন্তন মাইতি। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯২।

পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে ২২.৩৮ শতাংশ, ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে ৮.৪৭ শতাংশ। কলা বিভাগে পাশের হার ৮৮.২ শতাংশ, বিজ্ঞান বিভাগে ৯৭.১৯ শতাংশ, বাণিজ্য বিভাগে ৯৬.০৮ শতাংশ। 

দুই সেরা

প্রথম স্থানে থাকা অভীক ২০২২ সালে মাধ্যমিক দিয়েছিল। সেবার হয়েছিল চতুর্থ। এবার সবার শীর্ষে। দিনে প্রায় ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করত অভীক। 

সে বলেছে, ''আকাশ সম্পর্কে আমার আগ্রহ আছে। আমি আকাশের দিকে ছোটবেলা থেকেই তাকিয়ে থাকতাম। ভাবতাম, কী রহস্য লুকিয়ে আছে। আমি অ্যাসট্রো ফিজিক্স নিয়ে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে গবেষক হতে চাই।'' ইতিমধ্যেই জয়েন্ট দিয়েছে অভীক। অন্যান্য পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বারাসতের বাসিন্দা সৌম্যদীপ নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের পড়ুয়া। আবাসিক ছাত্র হওয়ায় কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে পড়াশোনা করেছে সে। বাইরে বেরোনো, এমনকি মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা ছিল। 

সৌম্যদীপ বলে, ''কয়েকমাস পর বাড়ি ফিরলে মোবাইল হাতে পেতাম। আমার কবিতা আবৃত্তি করতে ভালো লাগে। গণিত পছন্দের বিষয়। স্ট্যাটিস্টিক নিয়ে পড়তে চাই।''

পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে উর্দুতে প্রথম বেলালের কথা

৬৯ দিনে ফল

২০২৪ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ১৬ ফেব্রুয়ারি। চলে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবার ছাত্রের তুলনায় বেশি সংখ্যক ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা শেষের ৬৯ দিন পর ফল প্রকাশ করছে সংসদ।

এবার ৬০টি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল। যার মধ্যে ১৫টি ভাষার পরীক্ষা। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ''সব প্রশ্নপত্রে কিউআর কোড ছিল। প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। ৪১ জন পরীক্ষার্থী মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে এসেছিল। তাদের মোবাইল এবং অ্যাডমিট বাতিল করা হয়েছে।''

ফল ঘোষণা হলেও মার্কশিট পেতে সময় লাগবে। ১০ মে স্কুলগুলির হাতে মার্কশিট তুলে দেয়া হবে সংসদের ৫৫টি বিতরণ কেন্দ্র থেকে। ওই দিনই স্কুল থেকে মার্কশিট পাবে পরীক্ষার্থীরা। 

পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ

এবারই প্রথম ফলের রিভিউ ও স্ক্রুটিনির জন্য তৎকাল পরিষেবা চালু করছে সংসদ। ১০ মে মার্কশিট ও শংসাপত্র বিতরণের সঙ্গেই চালু হয়ে যাবে তৎকাল আবেদন জমা নেয়ার কাজ। 

সেদিন দুপুর দু'টো থেকে পোর্টাল চালু থাকবে ১৩ মে মধ্যরাত পর্যন্ত। তৎকাল ব্যবস্থায় আবেদনের সাতদিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে ফলাফল। একই দিন থেকে চালু হবে সাধারণ রিভিউ ও স্ক্রুটিনির জন্য আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া। আবেদন জমা দেয়ার শেষ দিন ২৫ মে। 

আগামী বছরের উচ্চমাধ্যমিকের দিনক্ষণ জানিয়েছেন সংসদ সভাপতি। শুরু ১৬ ফেব্রুয়ারি, শেষ ২৯ ফেব্রুয়ারি। দুপুর ১২টা থেকে ৩টে ২৫ পর্যন্ত পরীক্ষা নেয়া হবে।

আগামী বছর একাদশের পরীক্ষা কীভাবে হবে, সেটাও জানিয়েছেন সভাপতি। বলেন, ''একটা নির্দিষ্ট সময় দেয়া হবে। তার মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে। ঠিক যেভাবে বাকি ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষা হয়। অন্যান্য রাজ্য এবং জাতীয় বোর্ডের মতো একাদশের বার্ষিক পরীক্ষার দায়িত্ব থাকবে স্কুলের উপর।''

এই উচ্চ মাধ্যমিক ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে আইসিএসসি ও সিবিএসসি বোর্ডের সিনিয়র সেকেন্ডারি পরীক্ষা হয়। বাংলা ভাষায় যে সব স্কুলে পঠনপাঠন হয়, তার অধিকাংশই উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের অধীনে থেকে গেছে। বেসরকারি ইরাংজি মিডিয়ামের স্কুলগুলির অধিকাংশই আইসিএসসি বা সিবিএসসি বোর্ডের অধীনে আছে।

ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন কতটা ঠিকঠাক হয়েছে, সে নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে: হরিদাস ঘটক

মূল্যায়ন যথাযথ?

প্রতি ১০ জন পড়ুয়ার নয়জনই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে হলদিয়া গভর্নমেন্ট স্পন্সরড বিবেকানন্দ বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক ডক্টর হরিদাস ঘটক বলেন, ''গত কয়েক বছর ধরেই উচ্চমাধ্যমিকের ফল ভালো হচ্ছে। প্রাকটিক্যাল এবং প্রজেক্ট মিলিয়ে অনেকটা নম্বর ছাত্রছাত্রীরা এমনিই স্কুল থেকে পেয়ে যায়। তার উপর ৫০ শতাংশ ছোট প্রশ্ন। ফলে নম্বর তোলার খুবই সহজ হয়ে যায়। তবুও বলব, ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন কতটা ঠিকঠাক হয়েছে, সে নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে।''

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, ''গ্রামীণ বিদ্যালয়গুলিতে, বিশেষ করে উচ্চমাধ্যমিক বিভাগের বিষয় শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। তা সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীরা যে ফল করেছে, সেটা তাদের কৃতিত্ব। এটা সংসদ বা শিক্ষা দপ্তরের কৃতিত্ব নয়। কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পগুলি মেয়েদের পড়াশোনাতে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু ছেলেরা পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে চলে যাচ্ছে।''

উচ্চমাধ্যমিকের উচ্চ পাশের হার কি কলেজগুলিতে ভর্তির বাড়তি চাপ তৈরি করবে? হরিদাস ঘটক বলেন, ''কলেজে ছাত্র ভর্তি অনেক কমেছে আগের থেকে। কারিগরি শিক্ষা বিশেষ করে পলিটেকনিক, ইঞ্জিনিয়ারিং, এসব ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের যাওয়ার ঝোঁকটা বেড়েছে। কলেজে পড়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জায়গাটা এখন আর নেই। এসএসসির মতো সরকারি চাকরির পরীক্ষায় কী ঘটছে, দেখা গিয়েছে। পড়ুয়ারা হতাশ। ফলে অন্য রাজ্যে পড়তে চলে যাচ্ছে।''